উখিয়ায় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য কর্তৃক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার

 

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ কক্সবাজারের উখিয়ায় ২ বছর ধরে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির এক প্রভাবশালী সদস্যের যৌন লালসার শিকার হয়ে আসছে খোদ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রী। ওই ছাত্রীর পরিবার অসহায় হওয়ায় নিরবে সহ্য করে যাচ্ছে দিনের পর দিন; এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সম্প্রতি বিষয়টি লোকমুখে প্রচার হলে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আলোচিত ঘটনা হলেও দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কারণে ঘটনাটি এক প্রকার হোম কোয়ারাইন্টানে চলে গেছে।

এই লম্পট মৌলবী বশরের বাড়ী উখিয়ার ইনানীস্থ জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেপটখালী এলাকায়। বশর ওই এলাকার (৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ড) সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার মনোয়ারা খাতুনের স্বামী। তিনি ৪ সন্তানের জনক।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা দিয়ে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, উখিয়া উপজেলাধীন সোনারপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও সোনারপাড়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল বশর ওরফে মৌলানা বশর ওরফে ডা. বশরের সাথে মাদ্রাসার এক ছাত্রীর সাথে পরকীয়ার কাহিনী প্রকাশ হলে এনিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় সম্প্রতি সময়ে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের উপযুক্ত শাস্তির দাবী করছে সচেতন এলাকাবাসী।

মৌলভী আবুল বশর

সূত্রে জানা যায়, লম্পট মৌলভী বশর কক্সবাজার এলএও অফিসে দালালী করে বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার মালিক। দালালীর টাকায় নিজেকে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী দাবী করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে পরিচালনা কমিটির সদস্যপদ ভাগিয়ে নিয়েছেন।

পরিচালনা কমিটির সদস্য হওয়ার সুবাধে গরীব শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার নামে লোভে ফেলে প্রেমের ফাঁদ বসিয়ে যৌন নির্যাতন করে। এই অংশ হিসেবে গত ২ বছর ধরে ওই ছাত্রীর বাসায় গোপনে যাওয়া আসা করে লম্পট বশর। সর্বশেষ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সর্বনাশ করে এই লম্পট বশর। ওই ছাত্রী সদ্য সমাপ্ত এক দাখিল পরীক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর এক প্রতিবেশী জানান, দাখিল প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার দিন লম্পট বশর গভীর রাতে ওই ছাত্রীর বাসায় যান। খবর পেয়ে স্থানীয় মেম্বার রফিকের ভাই এনামের নেতৃত্বে এলাকাবাসী লম্পট বশরকে ধাওয়া করে। তখন থেকে ঘটনাটি প্রকাশ হতে শুরু করে। ঘটনাটি এখন “টক অব দ্য সোনারপাড়া” এবং মুখরোচক খবরে পরিণত হয়েছে।

বিষয়টি তার পরিবার পর্যন্ত গড়ালে তার স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মনোয়ারা কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে স্ট্রোক করে। এ অবস্থায় তার আত্মীয়-স্বজন তাকে উদ্ধার করে আল-ফুয়াদ হাসপাতালে ভর্তি করায় এবং সেখানে ২ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বিষয়টি লোকেমুখে প্রচারিত হলে সোনারপাড়া এলাকা থেকে গা ঢাকা দেয় ওই লম্পট। বিষয়টি নিয়ে তাদের ৪ সন্তানের সংসারটি ভাঙার উপক্রম দেখা দিয়েছে। বিষয়টি দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকগণের মধ্যে জানাজানি হলে সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্টানের পরিচালনা কমিটির সদস্য পদ থেকে তাকে দ্রুত বহিস্কার করার দাবী উঠেছে বলে জানান সচেতন এলাকাবাসী।

বিভিন্ন পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তার লম্পটের কারণে এখন পর্যন্ত ডজনখানেক সংসার ভেঙে যাওয়ার জনশ্রুতি রয়েছে।

সূত্রে আরো জানা গেছে, দাখিল পরীক্ষা চলাকালীন ওই ছাত্রীকে তার মোটর সাইকেলে করে পরীক্ষার হল পর্যন্ত পৌঁছে দিত। এমনকি শেষ পরীক্ষার পরে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে রাত্রি যাপন করে। পরে নোহা গাড়ি ভাড়া করে ২ জনই চট্টগ্রাম পর্যন্ত বেড়াতে গেছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে তার স্ত্রী উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উখিয়া থানা ওসি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন বলেও সূত্রটি জানান। তাছাড়াও মাদ্রাসা এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অনেক সদস্যকেও এবিষয়ে অবগত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন খোদ তার স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন।

দুই শিক্ষা প্রতিষ্টানের একাধিক অভিভাবক জানান, ডা.বশর নামের লম্পটকে উভয় প্রতিষ্টানের পরিচালনা কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যহতি না দিলে সরকার ঘোষিত বন্ধের পর প্রতিষ্ঠান চালু হলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আন্দোলনের গড়ে তোলা হবে।

সোনারপাড়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য নুরু জানান, ঘটনাটি অনেকের মুখে শুনে নিজেকে অপরাধী মনে করছি। পরিচালনা কমিটির সদস্য মানে একজন অভিভাবক। মৌলভী বশরের স্ত্রীও বিষয়টি সবাইকে অবগত করেছিল। তবে লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদি ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পায়; তাহলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে এ বিষয়ে খতিয়ে দেখা সবার প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আবুল বশর জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সোনারপাড়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসএম ছৈয়দ আলম জানান, আমি চিকিৎসার কাজে দেশের বাইরে ছিলাম। দেশে ফিরে অনেকের মুখে এ ঘটনাটি শুনেছি। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ যদি এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে পরিচালনা কমিটির বৈঠকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, লম্পট বশর কখনো নিজেকে ডাক্তার, কখনো ব্যবসায়ী, কখনো বিশিষ্ট ঠিকাদার, কখনো দোকানদার, কখনো শিল্পপতি, কখনো বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয় বহন করেন। কখনো মাদ্রাসার সভাপতি এবং কখনো হাই স্কুলের সভাপতি পরিচয় দেয়।